মায়েরা এক তুড়িতে উড়িয়ে দিলেও মেয়েদের কাছে যে সমস্যাগুলো ভয়ংকর


১৫ বছর বয়স কি শুধু ওর একারই, আমরা ১৫ বছর বয়স পার করে এসেছি না? কতইবা গ্যাপ? আমার তো মনে হয়, এই সেইদিন আমরা বড় হলাম! কই আমাদের বাবা-মা তো আমাদের নিয়ে এত ভাবেননি! ১৪ বছর হলো নাকি ১৫ বছর হল? আমাদের খারাপ হয়েছে কিছু? হয়নি।

তাহলে ওদের ১৪,১৫ নিয়ে আমাদের এত মাথা ব্যথা করতে হবে কেন? খাওয়াবো, সারাদিন পড়ার মধ্যে ব্যস্ত রাখবো আর এদিক সেদিক করলে, "মাইর এর উপর ওষুধ নাই"। ব্যাস! হয়ে গেল টিনেজ প্যারেন্টিং।

আপনিও কি এভাবে চিন্তা করেন?

আচ্ছা, আপনি যে আপনার কৈশোর দিয়ে আপনার মেয়ের কৈশোরকে বিচার করছেন, আপনার ওই সময় কি 4G এভেইলেবল ছিল? আপনার মা-বাবা কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করতো?

গ্যাপটা শুধু সময়কালের না, এই সময়ের মধ্যে সবকিছু কেমন দ্রুত বদলেছে, সেটার উপর নির্ভর করে। আপনার কাছে হয়তো ওর সমস্যাগুলো এক তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়ার মত কিন্তু কৈশোরে পা দেওয়া একটা মেয়ের জন্য এই সমস্যাগুলোই পর্বতসম।

আমি অনেক মেয়েকে পেয়েছি, যাদের শুধু শরীরের গঠন বদলে যাওয়ার (হরমোনাল পরিবর্তন) কারণেও মন খারাপ থাকে। নিজের শরীরকে অচেনা মনে করে। মেনে নিতে কষ্ট হয়। আহ্! এতদিনের আদরে বড় হওয়া "শৈশব"! মনের কোন একটা কোনায়, সেই বাবুবাবু ভাবটা সে মিস করে। অ্যাটেইনশন পাওয়ার সেই আকুলতাকে সে হারাতে চায় না।

একটু একটু করে সে বড় হয়, আর তার এই অ্যাটেনশন পাওয়ার এরিয়া বাড়তে থাকে। ছোটবেলায় বাবা-মা ভাই বোনের কাছ থেকে অ্যাটেনশন পাওয়ার যে নেশা ছিল সেটা বান্ধবী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এরপর খুব স্বাভাবিকভাবেই সে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে এক্সপ্লোর করা শুরু করে। এবং সেখানেও সে অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য চরম আকুতি ফিল করে। আর নিমেষেই সোশ্যাল মিডিয়ার “পারফেক্ট লুক” কালচার এর সহজ শিকারে পরিণত হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টার কালচার আর “পারফেক্ট লুক”-এর চাপ তাদের বুকের ভেতর অস্বস্তি আর অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। লাইক, কমেন্ট, ফলোয়ারের সংখ্যার সঙ্গে আত্মসম্মান বাঁধা পড়ে যায়। বয়ফ্রেন্ডের সামান্য একটা ভ্রুকুটিও মেয়েটার বড় একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। অন্যেরা কি বলছে সেটাই যেন একমাত্র সত্য হয়ে ওঠে।

বান্ধবীদের সঙ্গে তুলনা এবং জনপ্রিয় হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাদের মনে অজান্তেই হীনমন্যতার পাহাড় তৈরি করে।

শুধু কি তাই? সময়ের সাথে পড়াশোনার চাপ বাড়তে থাকে। ছোটবেলায় যে পড়াশোনা ছিল খেলার একটা অংশ, বড় হওয়ার সাথে সাথে সেটাই হয়ে যায় গুরুদায়িত্ব। পড়াশোনার চাপ, বোর্ড পরীক্ষার প্রতিযোগিতা, প্রাইভেট কোচিং-এর বোঝা, সবকিছু মিলিয়ে প্রচণ্ড এক মানসিক চাপ।

পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা সৃজনশীল প্রশ্ন মুখস্ত করলেও, অতিরিক্ত মানসিক চাপ মানসিক শক্তি শুষে নেয়, সৃজনশীলতা নষ্ট করে দেয়।

“ভালো কলেজে ভর্তি না হতে পারলে আমি শেষ,” “ভালো ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পেলে আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।” "রেজাল্ট ভালো না হলে বাবা মায়ের মান সম্মান ধুলায় মিশে যাবে।" " জীবনে ভালো কিছু করতে না পারলে লোকে কি বলবে"।

এইসব নানামুখী অস্থিরতা থেকে অনেক সময় তারা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন—
অতিরিক্ত ডায়েটিং বা ইটিং ডিসঅর্ডারে জড়িয়ে পড়া,
ভুল সম্পর্ক, মাদক বা অনলাইনের ভুয়া বন্ধুত্বে ফেঁসে যাওয়া,
প্রত্যাখ্যান বা ব্রেকআপের আঘাতে ডিপ্রেশনে ভুগা,
আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাওয়া, এমনকি সেলফ-হার্ম-এর ঝুঁকিতে যাওয়া।

“কেউ আমাকে বোঝে না” এই অনুভূতি থেকে তারা কখনো কান্নায় ভেঙে পড়ে, কখনো রাগে বিস্ফোরিত হয়, আবার কখনো একেবারে চুপচাপ হয়ে যায়। একদিকে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ, অপরদিকে স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব, বন্ধুদের চাপ, ব্যর্থতার ভয়, সব মিলিয়ে মানসিক অস্থিরতা থাকে তুঙ্গে।

কিন্তু দেখুন, কৈশোর এমন এক সময়, যখন সন্তানরা নিজেদের পরিচয়, স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎকে খুঁজে পেতে সংগ্রাম করে। এই সংগ্রামে ওদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে আপনি কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করছেন?